Wednesday, October 17, 2018

দুমুখো সহকর্মী!!!! কিভাবে সামাল দিবেন


একটা কথা ধ্রুব সত্য যে, যদি আপনি কর্মজীবী হন, মানুষ তার পরিবারের পর অন্য যেখানে বেশি সময় ব্যয় করে সেটা হল তার কর্মক্ষেত্র। অর্থাৎ কর্মজীবীদের দ্বিতীয় পরিবার হয়ে উঠে তাদের কর্মজীবন। আর কর্মক্ষেত্র মানেই সহকর্মীদের আনাগোনা।
কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় বিরুপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। কেননা আমাদের দীর্ঘ এই কর্মজীবনে এমন অনেক সহকর্মী থাকেন যারা ওপরে বন্ধুসুলভ আচরণ করলেও, সুযোগ পেলেই আড়াল থেকে  ঠিকই আপনাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেন।
 
বন্ধুবেশী দুমুখো সহকর্মী
 
তাই বন্ধুবেশী এইসব দুমুখো সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করাটা সত্যিই অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠে কেননা একই দলে কাজ করার কারণে ইচ্ছে হলেও আপনি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবেন না। আবার কর্মক্ষেত্রে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তাদের সঙ্গে আপনি বিতর্কেও জড়াতে পারেন না।
যদি এমন অবস্থার মুখোমুখি হন,তাহলে আপনাকে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তবে তার আগে চিনতে হবে ঐসব বন্ধুবেশী শত্রু কারা। তারা আপনার কাজে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা তাঁরা সৃষ্টি করছে, তাদের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করুন, এর  ওপর ভিত্তি করে সমাধানের পথে এগোনোই হবে আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ

নিজের কাজ আপনার বলে চাপিয়ে দেয়া  :

লক্ষ্য করলে দেখবেন এ ধরনের সহকর্মীরা প্রায়ই নানা প্রলোভন দেখিয়ে  নিজের কাজ আপনার ওপর চাপিয়ে দিয়ে মাঝখান থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করবে ক্ষেত্রে করনীয় কি??????
এক্ষেত্রে আপনার করনীয় হতে পারে ঊর্ধ্বতনের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করা যাতে করে তিনিও অবগত থাকেন এবং পরবর্তীতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনার জন্য আপনাকে যাতে দোষারোপ করা না হয়।
তবে তার আগে আপনার নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। তারপর যদি সময় থাকে ওই সহকর্মীর অনুরোধ আপনি রাখতে পারেন, যা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার কিংবা সুকৌশলে এড়িয়ে চলতে পারেন।

আপনার আইডিয়া চুরি করলে :

ধরুন আপনার প্রতিষ্ঠান কোনো প্রোজেক্টের কাজ হাতে নিয়েছে যার দেখভালের জন্য আপনি সহ আরো অন্যান্য কয়েক জনের উপর দায়িত্ব দেয়া হল। তাই কাজ শুরুর পূর্বে আপনাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক।
এই পর্বে আপনার আইডিয়ার কথা জেনে নিয়ে পরবর্তীতে তা নিজের বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে এসব বন্ধুবেশী সহকর্মীরা। এক্ষেত্রে আপনি যদি জানতে পারেন আপনার সাথে এমনটি হয়েছে,তবে প্রথমেই শান্ত ভাবে ওই সহকর্মীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন।  তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন কাজটি একক নয় বরং দলগত। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরির্থাত করার জন্য অন্যের আইডিয়া চুরি করা কখনই ভালো ফল বয়ে আনে না। তারপরও যদি কাজ না হয় তাহলে সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করুন।

প্রশংসার আড়ালে আপনার জায়গা দখলের পায়তারা :

কর্মক্ষেত্রে নতুন যোগ দেওয়া কোনো অধস্তন  সহকর্মী আপনার কাজ কাজের ধরন নিয়ে অতি উত্সাহ দেখাতে পারেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার কাজের ভূয়সী প্রশংসা সূচক বাক্যও হয়তো শুনবেন তার মুখ থেকে। কিন্তু প্রশংসার আড়ালে হয়তো নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আপনাকে ডিঙিয়ে আপনার পদে নিজেকে বসানোর জন্য নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে পারেন তিনি।
ক্ষেত্রে তার প্রশংসাবাক্যে গা না ভাসিয়ে দায়িত্তের প্রয়োজনে আপনাকে রূঢ় হতে হবে। তাঁকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে হবে, আপনার কাছে কর্মক্ষেত্রে তোষামোদির কোন সুযোগ নেই, বরং তার উন্নতি নির্ভর করছে আপনার মূল্যায়নের ওপর।

নিরাশার বীজ বুনে দিতে চাইলে :

লক্ষ্য করলে দেখবেন এ ধরনের সহকর্মীরা আলাপচারিতার সময় প্রায়ই আপনার কাছে প্রতিষ্ঠানের নানা বদনাম করবে আপনাকে নানান ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবে, এই প্রতিষ্ঠানের মতো দুর্বিষহ কাজের পরিবেশ আর কোথাও নেই। ছাড়াও আরও নানান অভিযোগ সমস্যার কথা আপনার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবে এভাবে আপনার ভেতর প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিরাশার বীজ বুনে দিতে চাইলে মোটেও তাতে কর্ণপাত করা ঠিক হবে না।
কেননা কোন প্রতিষ্ঠানে সত্যিই যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তবে ইতিবাচক উপায়ে তা সমাধানের পথ খুঁজে বের করার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারীর

কর্ম ক্ষেত্রে বন্ধুবেশী শত্রুদের মোকাবিলার আরও কিছু উপায় :

উপরের ঘটনা গুলো যদি আপনার সাথে ঘটে থাকে, মোটেই অবাক হওয়ার কিছু নেই কেননা আমরা প্রত্যেকেই ডিএনএ গত দিক থেকে ভিন্ন। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এসব সহকর্মীদের পর্যবেক্ষণে রাখুন যাতে বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটানোর সুযোগ না পায়
যৌথভাবে যদি কোনো কাজের দায়িত্ব পান, তাহলে শুরুতেই নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে কাজ ভাগ করে নিন। এতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তারপরও যদি কোন বাধার মুখোমুখি হন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর আগে আপনার অভিযোগগুলো যতটা সম্ভব স্পষ্ট করে লিখে ফেলুন। তবে ব্যক্তিগত কোনো মতামত লিখা থেকে বিরত থাকুন
পরিশেষে এটাই বলবো সমস্যা যেখানে সমাধানও সেখানে। কেনোনা আপনি , আমি,আমরা যেখানেই যাই না কেন, এসব দুমুখো সহকর্মীদের সাথে নিয়েই আমাদের কর্ম জীবন যাপন করতে হবে। তবে খুব বেশি গুরুতর না হলে চুপচাপ থাকাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ কিন্তু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভুল-বোঝাবুঝি অবসানের উদ্যোগ নিতে হবে আপনাকেই

No comments:

Post a Comment