Sunday, September 30, 2018

কিভাবে একজন কর্মীর গঠন মূলক সমালোচনা করবেন!!!!!!!

                       
একজন ব্যবস্থাপককে যেমন প্রতিদিনকার তার অধিনস্ত কর্মীদের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিতে হয় ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে কর্মীদের কাজের সমালোচনাও করতে হয়। একজন কর্মীর তার কাজের ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠার পেছনে বসের সহযোগীতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গঠনমূলক সমালোচনাও বেশ ভূমিকা রাখে
তবে,উক্ত সমালোচনা একজন কর্মীকে কিভাবে ( ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক) প্রভাবিত করবে তা নির্ভর করে স্থান,কাল,পাত্র ভেদে সঠিকভাবে তা প্রকাশ করার উপর।
এক্ষেত্রে একজন ক্রীড়াবিদ ও একজন কর্মীকে প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়াকে এক সূত্রে যোগ করা যেতে পারে। যেমন - কোন কোচ/প্রশিক্ষক যেমন একজন ক্রীড়াবিদের পারফরম্যান্স উন্নয়নের জন্য যেভাবে গঠনমূলক সমালোচনা করেন ঠিক একইভাবে যদি কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের সাথে গঠনমূলক আলোচনা করা যায় তবে তা ইতিবাচক ফল দেয়।
উভয় ক্ষেত্রেই সঠিক/গঠনমূলক সমালোচনা যেমন শ্রদ্ধা ও আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে পারস্পারিক লক্ষ্য অর্জনকে সহজতর করে তেমনি অনুপযোগী সমালোচনা ঊর্ধ্বতন-অধস্থন মধ্যকার সম্পর্ক বিষাক্ত করে তোলে।
আপনার কি মনে হয়??????        এক্ষেত্রে কি করা যেতে পারে???????

মনে রাখতে হবে, একজন ব্যবস্থাপকের সার্থকতা শুধু তার কর্মীদের কাছ থেকে যেনতেন ভাবে কাজ আদায় করিয়ে নেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং প্রতিনিয়ত সঠিক ভাবে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা যাতে করে কাজের সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকে। এক্ষেত্রে নিচের বিষয় গুলোর দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। যেমন----

১. কর্মীদের সমস্যা ও তার সমাধানের উপায়গুলো নির্দিষ্ট করা :


আজকের দিনে ব্যবস্থাপকেরা সাধারণত কর্মীদের কাজের গতানুগতিকভাবে সমালোচনা করে থাকেন। একটা কমন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করুন। যেমনঃ
             
“আমি বলেছিলাম কাজটা অন্য ভাবে করার জন্য। এভাবে কে করলো?”  

এর জবাবে হয়তো কোন কর্মীর নাম আপনার কানে আসবে। আপনি হয়তো রেগে গিয়ে অফিসের অন্যান্য কর্মীদের সামনেই উক্ত কর্মীকে অনেক কিছুই বললেন যা কাম্য হতে পারে না।
কর্মীদের সাথে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলুন
কর্মীদের সাথে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলুন

আমাদের সমস্যাটা ঠিক এখানেই। কেননা অধিকাংশ ব্যবস্থাপকই কর্মীর কাছে কি প্রত্যাশা করে থাকেন তা স্পষ্ট করে বলেন না বরং সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এক্ষেত্রে হয় কি কর্মীরা অনেক সময় সমস্যা সমাধানের সঠিক উপায়টি খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয়।

এক্ষেত্রে একজন আদর্শ ব্যবস্থাপকের কাজ হল গঠনমূলক সমালোচনা বা কার্যকরী আলোচনার মাধ্যমে কর্মীদেরকে অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে তার ভুলটা ধরিয়ে দেয়া এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে হবে।

ঠিক যেমন  ক্রিকেটে একজন ব্যাটিং কোচ ব্যাটসম্যানের সুক্ষ্ন সুক্ষ্ন বিষয়(ফুট ওয়ার্ক, গ্রিপ প্রভৃতি ) নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। কর্মক্ষেত্রেও ঠিক এ ধরনের গঠনমূলক আলোচনা কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে যা একই সাথে কর্মীর আত্নবিশ্বাসও বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুন।

২. কর্মীদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনার যোগসূত্র তৈরী করা:

আমাদের সবার মাঝেই স্বপ্ন থাকে জীবনে কিছু একটা করার। ধরুন কেউ হয়তো বড় ক্রীড়াবিদ হতে চান। এর জন্য তার নিজের সাথে সাথে তার বাবা মাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। সে হয়তো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে একদিন অলিম্পিকের মত বড় কোন আসরে অংশ নিয়ে বাবা মায়ের স্বপ্ন পুরন করবে

কিন্তু কঠোর অনুশীলনে মাঝে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। অমনোযোগী হয়ে পড়েন। আসলে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি?????
অবশ্যই স্বাভাবিক কেননা আমরা মানুষ। তাই আমাদের প্রয়োজন হয় একজন ভালো মেন্টর/ পরামর্শ দাতার।

খেলোয়াড়ি জীবনে কোচ তাকে উৎসাহিত করার জন্য কখনো কখনো বাবা মায়ের প্রতি তার মানসিক অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তার স্বপ্নটাকে আরও উজ্জ্বলতা দান করেন। যার ফলে নিস্তেজতা কাটিয়ে সে আরো বেশি উদ্যমী হয়ে উঠবেন তার লক্ষ পূরণে।


কর্মক্ষেত্রেও ঠিক একই পদ্ধতি অবলম্বনে কর্মীদের নিকট থেকে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যেতে পারে।
ধরুন, সাপ্তাহিক মিটিংগুলোতে অফিসের কোন একজন সহকর্মীর পৌঁছোতে প্রায়ই তার বিলম্ব হয় (ট্রাফিক কিংবা ব্যস্ততার কারনে)এরকম পরিস্থিতিতে আজকের দিনে ব্যবস্থাপকদের আচরণ কি হতে পারে, আশা করি বুঝতেই পারছেন!!!!  এমতাবস্থায় তার সাথে রুঢ় আচরণ ভালো কোন ফল তো বয়েই আনবেই না বরং এখানেই একজন আদর্শ ব্যবস্থাপক গতানুগতিক ব্যবস্থাপকদের চেয়ে ভালো একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সুযোগ রাখেন।
                                  
                    কিভাবে??????
 তিনি হয়তো তাকে সুন্দরভাবে বলতে পারেন যে –

তুমি কি মনে করো না এই কোম্পানিটি তোমার???
   যদি তাই মনে করো তাহলে কাজে অবহেলা কেন করছো!!!!
     ঠিক মত পৌঁছুতে না পারার করণে তোমার অন্যান্য -
     কলিগরাও কি মনে করছে তোমার সম্পর্কে, জানো তুমি??
       তুমি কি তাহলে মনে করো না যে সঠিক সময়ে পৌঁছুতে তোমার আরও প্রচেষ্টা চালানো উচিত

              কিংবা কৌশলী হয়ে বলা যেতে পারে,

তোমার মনে হয় না এই প্রবনতার কারণে সহকর্মীদের
        কাছে তোমার নষ্ট সুনাম হচ্ছে ?

এভাবে কর্মীর ব্যক্তিগত বিষয়ের সাথে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলোর গঠনমূলক সমালোচনার যোগসূত্র তৈরী করতে পারলে উক্ত কর্মীটিও হয়তো তার উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রতি আরো বেশি সচেষ্ট হয়ে ওঠবে এবং সমালোচনাটি হয়ে ওঠে গঠনমূলক।

৩. সমালোচনার মাঝে আস্থা ও প্রত্যাশা প্রকাশ করা:


একটি দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখে থাকি যে কখনো কখনো কোচ তার খেলোয়াড়দের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করেন যাতে কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় আবার কখনো প্রচন্ড উচ্ছাস নিয়ে ভাল পারফরম্যান্সর জন্য বাহবা দিয়ে থাকেন।
কর্মীদের অনুপ্রাণিত করুন
কর্মীদের অনুপ্রাণিত করুন

কর্মক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপকেরা ঠিক একইভাবে কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে পারেনহয়তো অফিস শেষে বের হওয়ার সময় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে পারেন যে -

“ বরাবরের মত এই মাসের সেলস টার্গেটও পূরণ করতে পেরেছি,
তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না আমরা আরও ভাল কিছু করার সক্ষমতা রাখি, তাই না!!!!! “

যদিও অনেকেই বিশ্বাস করে থাকেন যে, কর্মক্ষেত্রে নিরুদ্বেগ ও নিরপেক্ষে অভিব্যক্তির সমালোচনাই বেশি কার্যকর তবে বিভিন্ন সময় এটা প্রমানিত হয়েছে যে আবেগহীন কথোপকথনের চেয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা, প্রত্যশা এবং আস্থার প্রকাশের মাধ্যমে কর্মীদের সাথে আলোচনা বা কোন কাজের সমালোচনা বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে

৪. কর্মীর পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেয়া:

কোন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তার উপরে বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েএকজন খেলোয়াড় কেমন পারফর্ম করলো কোচ সেদিকে তীক্ষ্ন নজর রাখেন। তেমনি খেলোয়াড়েরাও প্রত্যাশা করে থাকেন কোচ তাদের পারফর্মেন্সের উপরে বিশ্লেষণী মতামত দেবেন।

কোচ তার নিজস্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দলের সকল খেলোয়াড়দের সাথে শেয়ার করবেন যাতে পরবর্তীতে আরো ভালো করার উপায়গুলো নিয়ে নিজের মধ্যে পরিকল্পনা করতে পারেন।

ঠিক তেমনি কর্মীরাও তাদের কাজের ফিডব্যাক প্রত্যাশা করে থাকেন এবং সেই সমালোচনায় ভবিষ্যতে আরো ভালো করার দিক নির্দেশনা থাকবে এমনটাই তারা প্রত্যাশা করে থাকেন।
  
তাই যখন কোন কর্মীর সমালোচনা করা প্রয়োজন পড়ে তখন ঊর্ধ্বতনদের চিন্তা করতে হবে যে - সে কিভাবে, কখন, কোন পরিস্থিতে সমালোচনা গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন। কেউ কেউ হয়তো ই-মেইলে বা ব্যক্তিগত আলোচনায় স্বাচ্ছন্দবোধ করতে পারেন কেউ আবার আড়ালে যাতে করে অন্যরা না জানতে পারে আবার কেউ অফিসে না করে এমন আলোচনা অফিসের বাইরে  অন্য কোথাও করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। 

তাই এখানে কর্মীর সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে কর্মী তার কাজের সমালোচনা কিভাবে এবং কোন স্থানে বসে শুনতে চান। এ ক্ষেত্রে কর্মীর ব্যক্তিগত পছন্দের প্রতি সম্মান জানানো উচিৎ নতুবা নেতিবাচক কিছু ঘটার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।

কর্মক্ষেত্রে ব্যবস্থাপক এবং তার সহকর্মীদের মধ্যকার সম্পর্ক সাবলীল ও উদার হওয়াটা জরুরী। আলোচনা - সমালোচনা গঠনমূলক হওয়া জরুরী। সমালোচনা প্রকাশে/উপস্থাপনে থাকা উচিৎ সৃজনশীলতা এবং দিক নির্দেশনা।

No comments:

Post a Comment