আপনি কি নিজের কর্মক্ষেত্রে সফল??? নিচের বিশিষ্টগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করুন
আমাদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে কেউ কেউ অন্যদের চাইতে বেশি সফল হন। এবং
এর কারনে অনেকে অনেক কথা বলে বেড়ান। অনেকে আবার বেশ ঈর্ষান্বিত হয়ে পরেন। যার ফলে অফিসের অন্যান্য
সহকর্মীদের মাঝে এক ধরনের অলিখিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।
লক্ষ্য করুন, এক্ষেত্রে আমি প্রতিযোগিতার বিষয়টিকে ছোট করে দেখছি
না, বরং বুঝাতে চাচ্ছি সহকর্মীদের সাথে
এমন কোন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে যাবেন না,যা আপনার জন্য অনাখাঙ্খিত ফল বয়ে
আনতে পারে।
তবে কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করেছেন যে, কেন ও সফল? আমি নই
কেন?
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে,ব্যক্তির কর্মদক্ষতা
নয়, বরং ঐ ব্যক্তির ব্যক্তিত্বই তাকে তার কর্মক্ষেত্রে
সফল করে তোলে। এক্ষেত্রে গবেষকদল ৫০০ জন শীর্ষ ব্যবসায়ীর উপর জরিপ চালান যেখানে ৭৮
শতাংশ ব্যবসায়ীই বলেছেন, ব্যক্তিত্বই একজনকে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের যোগ্য কর্মী হিসেবে গড়ে
তোলে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই বেশিরভাগ সময় শুধুমাত্র বুদ্ধিমত্তাকেই ব্যক্তিত্ব
পরিমাপের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এখানে
দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, মানুষের ইন্টালিজেন্ট বা বুদ্ধিমত্তা নয় বরং ব্যক্তির ইমোশনাল বা আবেগের
বিষয়টাই ব্যক্তিত্ব গঠনের এক মাত্র হাতিয়ার।
যে সহকর্মীরা অন্য সকলের চোখে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন, আসলে তাদের মাঝে
ইমোশনাল কোশেন্টই বেশি কাজ করে ,ইন্টালিজেন্ট কোশেন্ট নয়।
- শুধু কাজে পটু ব্যক্তিদের চাইতে ব্যক্তিত্বের অধিকারী সম্পন্ন কর্মীরা অধিক আত্মবিশ্বাসী হন । তারা কখনও কাজের পরিধির উল্লেখ করেন না অর্থাৎ তারা একথা বলেন না, এটা আমার কাজ নয় কিংবা এটা আমার জব ড্রেসক্রিপশনে ছিল না। বরং এরা নিজের কাজের বাইরেও অনেক কাজ করে থাকেন যা তাকে সত্যিই ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, পারলে অন্যদের জন্যও সাহায্যের হাত প্রসারিত দিন ।
- ব্যক্তিত্ববান সম্পন্ন মানুষ নিজেদের ইগো নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেন। নিজের ভুলত্রুটি সহজে স্বীকার করে নিতে জানেন। জটিল কোন কাজ বা পরিস্থিতিকে কীভাবে আরও উন্নত করে তোলা যায় তা নিয়েও ক্রমাগত ভাবনা-চিন্তা করেন এই জাতীয় কর্মীরা। তাই আপনার সহকর্মীদের এড়িয়ে গিয়ে নয়, বরং তাদেরকে সাথে নিয়েই বিরুপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করুন।
- সহকর্মীরাই আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে। কিভাবে??????????????????????????? এক হাতে যেমন তালি বাজে না তেমনি (আপনি যেখানেই থাকুন না কেন) সহকর্মীদের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া কর্মে উন্নতি সম্ভব নয়। বলতে পারেন একে অপরের পরিপূরক। তাদের প্রয়োজনে যেমন আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন বিপরীতে আপনার প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতা নিন। তাদের মতামতের গুরত্ত দিন।
আমাদের অনেকেরই মাঝে সহকর্মীদের প্রতি এক ধরনের উপেক্ষার মনোভাব
লক্ষ্য করা যায়, যা আপনার জন্য মোটেও কাম্য নয়। তাদের নানান পরামর্শ সাদরে গ্রহণ
করুন। এতে নিজেকে খাটো করে দেখার কোন কারণ নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি আপনার
সাফল্যকে তরান্বিত করতে সাহায্যে করে।
- মানুষের যেকোন কাজে, হোক সেটা কঠিন কিংবা দুঃসাধ্য,সফলতা আনে এই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা। আমাদের জীবনে তাই সফল হতে হলে এটিই বেশি দরকারি। কেননা তা আমাদের ব্যক্তিত্বকে ভালভাবে ফুটিয়ে তোলে। অন্যদিকে নেতিবাচক চিন্তার মানুষ সারাক্ষণই হতাশা,দুঃখ ও বিষণ্নতায় ভোগে যা তার ব্যক্তিত্বকে ক্ষুণ্ন করে। তাই ব্যক্তিত্ববান হতে চাইলে সকল পরিস্থিতিতেই ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবে এই ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস আমাদের মাঝে এক দিনে গড়ে উঠে না। এর জন্য নিজেকে তৈরি করতে হয়।
- কথা ও কাজের মধ্যে মিল রাখাই হচ্ছে ব্যক্তিত্ববান মানুষের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। তাই ব্যক্তিত্ববান হিসেবে নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপন করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। যে কাজটি করা আপনার পক্ষে করা সম্ভব না, সেটা নিয়ে চেষ্টা না করাই ভাল। তাই সবসময় চেষ্ঠা করুন কথায় ও কাজে মিল রাখতে।
- প্রচলিত বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য রয়েছে :
“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”
জীবনে উন্নতি করতে চাইলে ইতিবাচক চিন্তার
অধিকারী হতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই আর নেতিবাচক মানুষের সাথে মেলামেশা, আমাদের ইতিবাচক চিন্তা
করার পথ রুদ্ধ করে দেয়। কেননা নিষিদ্ধ দিকের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই বেশি।
তাই নেতিবাচক মানুষের সঙ্গে
মেলামেশা আপনার চিন্তাশক্তির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এবং ধীরে ধীরে আপনার চিন্তাও নেতিবাচক দিকে রূপ নেবে এবং যেটা আপনার জীবনে
ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু আপনি যদি ইতিবাচক মানুষের সাথে মেলামেশা করেন তাহলে আপনার চিন্তাশক্তিও তাদের সংস্পর্শে এসে পজেটিভ হবে। এবং তাদের কাছ থেকে আহরিত
শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে উন্নতি সাধন করা সম্ভব।
- আমরা মানুষ। আমাদের দ্বারা ভুল হবে এইটা স্বাভাবিক। ভুল করা অন্যায় কিছু নয় কিন্তু এই ভুলটাকে না সুধরে নিয়ে সেই ভু্লের পুনরাবিত্তি করা অন্যায়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ সেই কাজটাই করে চলে প্রতিনিয়ত।
জীবনের সেই না চাওয়া ভুলের জন্য
নিজেকে দোষারোপের মাধ্যমে সেই ভুলটাকেই আঁকড়ে ধরে বসে থাকি আর এই কারনেই আত্মবিশ্বাসে
দেখা দেয় ব্যাপক ঘাটতি । যার ফলে নতুন কোন কাজে আমাদের আর হাত দেয়া হয়ে উঠে না। নতুন কোন
লক্ষ্যের দিকে আমাদের মন আর ধাবিত হয় না। যার ফলে সেই সব ব্যক্তিকে সাফল্য কখনই ধরা দেয় না।
কিন্তু এই ভুলকে পাশ কাটিয়ে, নিজেকে
যদি ক্ষমা করে, আপন
উদ্যমে কাজে নেমে পড়ি, তখন কে জানে ফলাফলটা ভিন্ন হলেও হতে পারতো।
সাফল্য আপনার / আমার কাছে এক দিনে
আসে না। আর আসে না বলেই আমরা জ্যাক-মা কে পেয়েছি।তাই আমাদের অতীতের করা কোন ভুলের
জন্য নিজেকে দোষারোপ না করে,বরং নিজেকে ক্ষমা করার মাধ্যমে নতুন করে কাজে নেমে পড়লেই আমাদের
জীবন সফলতায় ভরে উঠবে। আর এই প্রক্রিয়াই আমাদের মাঝে ইতিবাচক চিন্তার মনোভাব গড়তে
সহায়তা করবে।
- ইতিবাচক চিন্তার ফলাফল ইতিবাচকই হয় কিন্তু এরমানে এই নয় যে আপনি আপনার ভুল গুলোকে এড়িয়ে যাবে। সেগুলোকে প্রশ্রয় দেবেন। বরং এর মানে হলো আপনার করা ভুলগুলো বা নেতিবাচক দিকগুলো খুঁজে বের করে ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে সেই ভুলের সমাধানের পথে এগিয়ে চলা।
কিন্তু আমরা যদি ভুলগুলোকে এড়িয়ে যাই, তাহলে কোন ক্ষেত্রেই উন্নতি
করা সম্ভব নয়। কেননা ভবিষ্যৎ এ সেই ভুলগুলোই যে পুনরায় আমাদের দ্বারা সংগঠিত হবে
না, তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? তাই বুদ্ধিমত্তারর সাথে সেই ভুলের উৎস খুজে বের করে
এবং এর সমাধান বের করলে পরবর্তীতে আমাদের দ্বারা সেই ভুলগুলো আর হবে না।
- “Failure is the pillar of success” ইংরেজির এই প্রবাদ বাক্যটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বাস্তবেও কিন্তু তাই, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা লাভ করেই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছানো সম্ভব।
আমরা যদি ব্যর্থ হয়ে আমাদের জীবনের পথচলা
বন্ধ করে দেই, সেই ব্যর্থতাকে কাজে না
লাগিয়ে, সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নেই,তাহলে আপনার সেই
কাঙ্ক্ষিত বিজয় নিশ্চিত হবে না। তাই আমাদের প্রয়োজন সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগানো। ব্যর্থ হওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া না
নয়। ব্যর্থ হওয়া দমে যাওয়া না নয়।এই কথাটাকে চিরন্তন সত্য হিসেবে ধরে নিয়েই দুর্বার
গতিতে এগিয়ে চলতে হবে। তাহলেই না সাফল্যের শেষ হাসিটা আপনার মুখেই ফুটবে। তাই ব্যর্থতাকে সঙ্গী করুন।এটিই আপনাকে পৌছে দিতে পারে সাফল্যের
শীর্ষচূড়ায়।
পরিশেষে বলব, কাজের ক্ষেত্রে আমাদের
ডিগ্রী/ অভিজ্ঞতা দরকার হয়,তবে তার কোনটাই ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে নয়।
আপনি/আমি, আমরা সবাই একটি সুন্দর জীবনের প্রত্যাশা করি। আর একটি সুন্দর জীবন গড়ার জন্য নিজেকে একজন আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে গড়ে তুলুন। আর একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিই তার পরিবার,সমাজ কর্মজীবন সব ক্ষেত্রেই সফল। তাই নয় কি???????
আপনি/আমি, আমরা সবাই একটি সুন্দর জীবনের প্রত্যাশা করি। আর একটি সুন্দর জীবন গড়ার জন্য নিজেকে একজন আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে গড়ে তুলুন। আর একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিই তার পরিবার,সমাজ কর্মজীবন সব ক্ষেত্রেই সফল। তাই নয় কি???????
No comments:
Post a Comment